Monday, March 22, 2010

দ্বন্দ ঃ বাংলা সিনেমাতে মস্কো আর্ট থিয়েটারের স্বাদ



সিনেমাটা এই মাত্র দেখে উঠলাম। আমাজন থেকে কিনে ছিলাম-এই প্রথম কোন বাংলা সিনেমার নতুন রিলিজের একটা অথেন্টিক ডিভিডি আমেরিকাতে বসেই দেখতে পাচ্ছি-এটা ভেবেই আমি উদ্বেলিত!

যেকোন ভাল সিনেমা দেখার সব থেকে বড় প্রাপ্তি "রেশ"-বিরিয়ানির স্বাদটা মনের তন্ত্রে কতটা নাড়া দিল। স্বাদের সেই রেশটা মনে কি দাগ কেটে গেল! সেটাই পাওনা। দেখেই মনে হলে চেকভের কোন নাটক দেখে উঠলাম-নিট একটা দুর্দান্ত ছোটগল্প। হইয়াও হইলোনা শেষ স্টাইলের ফিনিস-মস্কো আর্ট থিয়েটারের পরিবেশনা-আর স্ট্যানিজলাভস্কির অভিনয় ঘরানার জাদুকর সৌমিত্রের " রাউন্ড টেবল" বিশ্লেষন। অভিনেতার আবেগ সেখানে বিমূর্ত-ডিটাচড-কিন্ত অবজেক্টিভ। লি ট্রাসবার্গ বা রবার্ট লুইসের থেকেও আমার দ্বন্দের সৌমিত্রকে আরো বেশী ভাল লাগল-বিশেষত এরা সবাই স্ট্যানিজলাভস্কির মন্ত্রশিষ্য। অন্যন্যাও এই দৃশ্যে সত্যই সৌমিত্রের সমকক্ষ-শুধু একটাই আক্ষেপ। অন্তিম দৃশ্যে পরিচালক অনন্যার ক্লোজ আপ শট বেশী নেন নি-মানসিক দ্বন্দের জন্যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজেরই আশ্রয় নিয়েছেন বেশী। আমার মনে হয়েছে অন্যন্যার মুখাভিনয়টা বেশ শক্তিশালি-সেটা পরিচালক অন্তিম দৃশ্যে আরেকটু বেশী ব্যাবহার করতে পারতেন।

স্ক্রিপ্ট বেশ স্মার্ট-প্রথম দিকে একটু শ্লো। ধ্রুপদী সঙ্গীতের মতন গল্পের বিবর্তন এবং বিস্তার। শেষের দিকের চিত্রনাট্য শুধু স্মার্ট না ব্রিলিয়ান্ট ও বটে। তবে এই ধরনের সিনেমার সংলাপে আরো বেশী শৈল্পিক সংঘাতের দরকার-যা শেষ দৃশ্যে পূরণ হয়েছে। প্রথমের দিকের স্ক্রিপ্টটা আরো উন্নত করা যেত।

সৌমিত্র, অনন্যার পরে সিনেমাটার সব থেকে বড় পাওনা ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের অসাধারন ব্যাবহার। মৌয়ুখ ভৌমিকের দক্ষতা প্রশ্নাতীত-আর সেই জন্যেই সিনেমটার কিছু কিছু অংশে মেট্রোপলিটান অপেরার স্বাদ। যা বাংলা সিনেমায় কিছুটা অভিনব স্বাদ-একটা নতুন বাতাস। তবে পাশ্চাত্য ধ্রুপদের ব্যাবহারে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছি না-কিছু কিছ ক্ষেত্রে সাউন্ড লেভেল মিক্সিং বেশ দুর্বল।

এর পরে লাখ টাকার প্রশ্ন-দ্বন্দ আন্তর্জাতিক মানে কোথায়? বাংলা যেসব সিনেমা দেখি-তার থেকে অনেক ভাল-সেত সন্দেহ নেই। কিন্ত আন্তর্জাতিক মানে এটাকে কোথায় রাখব? আমি নিজে ফেলিনি, কুরোসোয়া, চেন কাইজের ভক্ত। সৌমিত্র অনন্যার অভিনয়, নেপথ্য সঙ্গীত বা গল্পটা সত্যই সেই প্রত্যাশা পূরন করেছে। কিন্ত ক্যামেরার কাজ আরো ভাল করতে হবে। ডায়ালোগে আরো বেশী সাহিত্যিক গভীরতা এবং শিল্প চাই। সিনেমাটোগ্রাফিও অনেক অনেক ভাল করা দরকার। বাংলা ফিল্প ইন্ডাস্ট্রি অবশ্যই এটা পারে-যদি সিনেমাতে টাকা ঢালা যায়। ঘি না ঢাললে ত আর বিরিয়ানি তৈরী হয় না।

এই জন্যেই আমি আন্তরিক ভাবে চাইছি ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের উদ্দেশ্য যে বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক বাজার -সেটা সফল হৌক। পশ্চিম বঙ্গের বাইরে থাকা ৫ মিলিয়ান বাঙালীর কাছে বাংলা সিনেমা পৌছে দিতে পারলে, এই ধরনের উন্নত আন্তর্জাতিক মানের বাংলা সিনেমা তৈরী করা সম্ভব। কুরোসোয়া বা ফেলিনির সিনেমার আন্তর্জাতিক দর্শক, তাদের দেশের দর্শকের থেকে অনেক বেশী। সৌমিত্র, অনন্যার মতন অভিনেতা অভিনেত্রী বা সুমন বাবুর মতন পরিচালকরা থাকতে সেটা হবে না কেন? ক্যাশ ফ্লো এলে অবশ্যই হবে।

দ্বন্দ সেই আশাটাই জাগিয়ে রাখল।

No comments:

Post a Comment