Tuesday, March 16, 2010

হলিউডের বাঙালী অভিনেতা সম্রাট চক্রবর্ত্তী বাংলা সিনেমা নিয়ে কি ভাবছেন?

সম্রাট চক্রবর্তী- নামটি খুব বাঙালি শোনালেও তিনি আসলে একজন হলিউড অভিনেতা। তিনি অ্যামেরিকান রিপার্টরি থিয়েটার এবং মস্কো আর্ট থিয়েটার স্কুল থেকে অভিনয়ে স্নাতক হয়েছেন। অভিনয় করেছেন 'ল অ্যান্ড অর্ডার', 'সপরানো' এবং এমন আরও অনেক বিখ্যাত মার্কিন টিভি প্রোডাকশনে। এছাড়া তিনি 'দ্য বং কানেকশন' ও 'পিয়ালির পাসওয়ার্ড' এর মত বাংলা সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন।





১৬ই মার্চ তার নতুন সিনেমা 'দ্বন্দ্ব' পুরো উত্তর অ্যামেরিকার হোম এন্টারটেইনমেন্ট মার্কেটে অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স ও ব্লকবাস্টারের মাধ্যমে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। 'দ্বন্দ্ব' ১৬ই মার্চ ইতিহাস তৈরি করবে। এমনকি এটি প্রথম বাংলা সিনেমা যা একইসাথে ভারত এবং উত্তর অ্যামেরিকার মার্কেটে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার-এর কারণে যারা উত্তর অ্যামেরিকায় 'ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো' তে বাংলা সিনেমা সরবরাহ করে। উত্তর অ্যামেরিকায় থেকে এভাবে বাংলা মুভি দেখতে পারা সত্যিই বিস্ময়কর, কারণ এখানে বাংলা ছবি মুক্তি পায় না।





বিপ্লব: তো সম্রাট, ভিএনএন রেডিও তে স্বাগতম।





সম্রাট: আমাকে নিমন্ত্রণ করার জন্য ধন্যবাদ, বিপ্লব।





বিপ্লব: আপনার ক্যারিয়ারটা খুবই আন্তর্জাতিক। এই বয়সে হলিউড, বলিউড, টলিউড সবখানে অভিনয় করতে পারাটা সত্যিই বিস্ময়কর। তো এ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতাটা কি আমাদের একটু বলবেন? আপনার তুলনামূলক অভিজ্ঞতাটা কেমন?





সম্রাট: প্রথমেই বলতে চাই ছোটবেলা থেকেই যাদের ছবি দেখে এসেছি, যারা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে তাদের সাথে কাজ করতে পারায় আমি নিজেকে সম্মানিত ও ভাগ্যবান মনে করি। আমি বড় হয়েছি অ্যামেরিকার ম্যাসাচুসেটস এর বস্টনে। বাবা-মা কে অনেক ধন্যবাদ যে তারা আমাকে ছোটবেলায়ই বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ৮ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ও কবিতার সাথে আমার খুব ভাল পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। এমনকি সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার সাথেও সেই সূত্রে পরিচয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ছেলেপেলে বড় হয় টেলিভিশনে ককেশিয়ান অভিনেতাদের দেখতে দেখতে, ই.টি. এবং স্টার ওয়ারস এর মত সিনেমার সাথে পরিচয় ঘটে- আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। একদিন আমার মা অমিতাভ বচ্চনের 'নমক হালাল' নামে একটা সিনেমা ভাড়া করে নিয়ে আসে। এটাই আমার দেখা প্রথম বচ্চন সিনেমা এবং এটা দেখেই আমার মধ্যে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছিল। তরুণ অমিতাভ বচ্চন, বড় পর্দায় এতো সুন্দর সুন্দর গান, সেই প্রথম বড় পর্দায় এমন শক্তিশালী কোন ভারতীয় চরিত্র দেখা। সেটা ছিল বিস্ময়কর, আমাকে আরও ভারতীয় সিনেমা দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। পরবর্তীতে অনেক ভারতীয় সিনেমা দেখেছি, যেমন সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী। এভাবেই আমার মাঝে সিনেমার অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠে।ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আমি স্পাইক লি-র মত পরিচালকদের সাথে কাজ করতে পেরেছি যিনি "ডু দ্য রাইট থিং" এর মত বিখ্যাত সিনেমা করেছেন। এটা আসলেই খুব বিস্ময়কর এবং অনেকটা একই রকম। ইন্ডাস্ট্রির কথা আসলে আপনি হয়তো বলিউড, টলিউড বা হলিউড বলবেন, কিন্তু আমি বরং বলিউডকে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং টলিউডকে বেংগলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নামে ডাকব কারণ এগুলো ইনডাস্ট্রি হতে চায় ব্যাপারটা এমন না, এরা সবাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ইন্ডাস্ট্রি। বলিউড তথা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তো অনেকদিন ধরে সিনেমা বানিয়ে আসছে। এমনকি এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অনেকদিন থেকেই এটা সর্ববৃহৎ ছিল কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে।তবে আমি আবারও বলছি, ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, বেংগলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং হলিউড অনেকটা একই রকম। আমি যেমন স্পাইক লি-র সাথে কাজ করতে পেরেছি যা আমার জন্য খুবই গর্বের বিষয়, তার করা "শি হেইট মি" সিনেমায় কাজ করেছি। তেমনি আবার অমিতাভ বচ্চনের সাথে কাজ করে ধন্য হয়েছি। বচ্চন ইয়াশ রাজ ফিল্মস এর ব্যানারে সিলসিলা করেছিলেন। সম্প্রতি ইয়াশ রাজ এর ব্যানারে হওয়া নিউ ইয়র্ক সিনেমায় আমি তার সাথে কাজ করতে পেরেছি। এটি আমার জন্য এক বিশাল উপহার ছিল এবং এর অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। আবার সম্প্রতি টলিউড তথা বেংগলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করাটাও অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিয়েছে। অনেক বছর ধরেই আমি সৌমিত্র চ্যাটার্জির গুণমুগ্ধ, 'অপুর সংসার' দেখার পর থেকেই। দ্বন্দ্ব সিনেমায় তিনি আছেন, বং কানেকশনেও ছিলেন।কিন্তু দ্বন্দ্বের অভিজ্ঞতা খুব মনে পড়ছে। এমনকি সিনেমাটা ডাব করার সময় আমি সৌমিত্র্য চ্যাটার্জির সাথেই ছিলাম ডাবিং রুমে। আসলে আমি ডাবিং রুম থেকে বের হচ্ছিলাম আর তিনি ঢুকছিলেন। সে ছিল আমার জন্য খুব স্মরণীয় একটা মুহূর্ত। আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপ হয়েছিল, তিনি সত্যজিৎ রায়ের 'অরণ্যের দিনরাত্রি' সিনেমার সেটে ঘটা কিছু মজার অভিজ্ঞতা বলেছিলেন আমায়।এই কাজগুলো করতে পারায় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তাছাড়া আমার অভিনয় ক্যারিয়ার আমাকে ভারত পুনরাবিষ্কারে সাহায্য করেছে, আমার বাবা-মা যেদেশ থেকে এসেছেন সেই দেশ পুনরাবিষ্কারে। আমি মেট্রো বা বাসে করে ঘুরতে পারছি এই দেশেরই একটি শহরে, সত্যজিৎ রায় যে স্থানগুলোতে শুটিং করেছিলেন সেগুলো নিজ চোখে দেখতে পারছি। আমার পূর্বপুরুষদের ভূমিতে ঘুরে ফিরতে পারছি। তাই এই তিনটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পেরেই আমি ধন্য। এবং সত্যি বলতে এই তিনটা ইন্ডাস্ট্রিই একই মৌলিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, যাদের গুণমুগ্ধ ছিলাম তাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে আমাকে যে পথ ধরে এগুতে হয়েছে সবখানেই তা একই ছিল। এবং সকল ক্ষেত্রেই যাত্রাগুলো ছিল চমকপ্রদ।





বিপ্লব: আচ্ছা, এবার দ্বন্দ্বে ফিরে আসি। এখানে আপনার চরিত্রের মাধ্যমে বিবাহবহির্ভূত প্রেম এর সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। আপনার এই চরিত্রায়ন কি প্রাকৃতিকভাবেই এসেছে, নাকি নিজের মত করে নতুনভাবে চরিত্রটি তৈরি করেছেন?





সম্রাট: (হাসি) আপনি জানেন যে অভিনেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে একটা গল্প সৎ, বিশ্বাসযোগ্য এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা। আমি অনেক ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছি- ইন্টারোগেটর, প্রেমিক; আর অভিনেতা হিসেবে আমাদের দায়িত্বের একটা বড় অংশ হচ্ছে নিজের আইডিয়া চরিত্রের মধ্যে নিয়ে আসা, নিজেদের মত করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। কিন্তু একই সাথে এটা কল্পনা, সৃজনশীলতা এবং পারষ্পরিক সহযোগিতার অংশ যার সাহায্যে চরিত্রটা তৈরি হয়।





বিপ্লব: চরিত্র রূপায়নে নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আপনি পরিচালক সুমনের কাছ থেকে কতটুকু স্বাধীনতা পেয়েছেন?





সম্রাট: চরিত্রের মধ্যে নিজে থেকে কিছু যোগ করা, কিছু সৃষ্টি করা বা ক্ষেত্রবিশেষে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সুমন আমাকে দিয়েছে। আমাকে নিজের মত করে কিছু যোগ করতে দেয়ার ক্ষেত্রে সুমনের সুস্পষ্ট দূরদৃষ্টি এবং উদারতা ছিল বিস্ময়কর। আমি মাঝেমধ্যেই কোন একটা লাইন বা কোন একটা মুহূর্ত নিয়ে তাকে প্রশ্ন করতাম, সে উত্তর দিত ঠিকই কিন্তু আবার বলত যেন আমি নিজে নিজে বিষয়টা ভেবে দেখি, নিজের মত করে। সে আসলে সত্যিকার অর্থেই এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছিল যাতে কাজটা স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে পারে। তার সাথে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে, অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি; এমন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন পরিচালকের সাথে কাজ করতে পারা এবং সুন্দরী অনন্যা চ্যাটার্জির প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করা, সত্যিই অনেক বড় ব্যাপার।





বিপ্লব: আচ্ছা এবার অনন্যা চ্যাটার্জির প্রসঙ্গে আসি। তার সাথে কাজ করে কেমন লেগেছে? আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আপনি তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?





সম্রাট: আমি মনে করি অনন্যা খুব শক্তিশালী এবং স্বতঃস্ফূর্ত একজন অভিনেত্রী। এখানে থেকে সে অনেক ভাল কাজ করতে পারবে। তার সাথে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে এবং একই সাথে খুব মজাও পেয়েছি। কারণ সে খুব বিনয়ী, একইসাথে আবার খুব শক্তিশালী। চোখ দেখেই তার গভীর ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। সে খুব স্বতঃস্ফূর্ত, স্বভাবসিদ্ধ অভিনেত্রীদের মতোই অভিনয় করতে তার খুব একটা শ্রম দিতে হয় না। স্বাধীন, আন্তর্জাতিক বা হলিউড সিনেমায় আমি অনেকের সাথেই অভিনয় করেছি। যেমন 'কিসিং কাজিনস' এ ব্রিটিশ অভিনেত্রী রেবেকা হেজলউড এর সাথে কাজ করেছি। এলিজাবেথ রিজার হলিউড সিনেমা ও টেলিভিশন ফিল্মের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী, 'দ্য ওয়েডিং উইকএন্ড' সে আমার কো-স্টার ছিল। সত্যি বলতে অনন্যা তাদের একেবারে সমমানের, মেধা এবং পেশাদারিত্ব সকল দিক দিয়েই।





বিপ্লব: তা জেনে ভাল লাগল। কিন্তু একজন দক্ষিণ এশীয় হিসেবে হলিউডে কাজ করতে গিয়ে কি আপনার কোন অসুবিধা হয় না? কারণ আমার অভিজ্ঞতা বলে, ককেশিয়ান না হলে হলিউডে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া খুব কষ্টকর। সুতরাং আপনি কি মনে করেন, বলিউড এবং এখন টলিউড যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয় অভিনেতাদের জন্য নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে?





সম্রাট: হ্যা, আমি মনে করি এটা ধীর প্রক্রিয়া, কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ভারতীয় ও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয় অভিনেতাদের জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। এবং আমি মনে করি দ্বন্দ্বের একই সাথে অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স এবং ব্লকবাস্টারের মত সবগুলো চ্যানেলে একই দিনে মুক্তি পাওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এগিয়ে যেতে হলে এ ধরণের কাজ আরও করতে হবে।অ্যামেরিকায় আমি স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। শিক্ষকরা আমাকে অভিনয় করতে উৎসাহিত করে বলেছেন, ককেশিয়ান না হলেও কোন অসুবিধা নেই, অ্যামেরিকায় আন্তর্জাতিক পরিবেশ রয়েছে। তারপরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় ককেশিয়ান না হয়ে হলিউডে নাম করা বেশ কষ্টকর। প্রখ্যাত আফ্রিকান-অ্যামেরিকান অভিনেতা সিডনি পোয়াটিয়ে আজ থেকে ৫৫ বছর আগে অস্কার পেয়েছিলেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আর কতজন আফ্রিকান-অ্যামেরিকান সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পেয়েছেন? যথেষ্ট নয়। আমি আশাকরি এই ইন্টারনেট সমাজে সবকিছুর গতি যেহেতু আগের চেয়ে বেশি সেহেতু ভারতীয়দের তেমন অবস্থায় আসতে আরও কম সময় লাগবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা বেশ ধীর গতিতে আগাচ্ছি। আসলে আমাদেরকে আরও সংঘটিত হতে হবে, নিজেদের সম্প্রদায়কে আরও সমর্থন জোগাতে হবে। বৈশ্বিক বাজারে উন্নতি করার একটাই উপায় আছে, পাইরেসি-র মত কাজগুলো পুরোপুরি বন্ধ করা। এটা আমি আরও একবার বলতে চাই। ডিভিডি-র ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই পাইরেসি বন্ধ করতে হবে।বিপ্লব: আচ্ছা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলা সিনেমাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন এবং বাংলা সিনেমাকে বৈশ্বিক স্কেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার পরামর্শ কী?সম্রাট: একেবারে প্রথম থেকে শুরু করা যাক। সত্যজিৎ রায়ের সময়টাতে বাংলা সিনেমা যে শুধু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেছে তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে তাকে ছাড়িয়েও গেছে। এমনকি রায়ের "অপু ত্রয়ী" সেই সময়ই সব আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছে। আমি মনে করি, বর্তমানে তেমন পর্যায়ে পৌঁছানোর উপকরণ সবই আছে। কিন্তু আসল বিষয় হচ্ছে গল্প এবং নির্মাণ কৌশলের দিক দিয়ে উঁচু মান বজায় রাখা এবং সেটা ভালভাবে প্রকাশ করা।সুমন ঘোষের 'দ্বন্দ্ব'-এ নির্মাণ এর মান এবং গল্প খুবই সুন্দর। এতে রয়েছে বরুন মুখার্জির চমৎকার চিত্রগ্রহণ এবং ময়ূখ ভৌমিকের অনন্যসাধারণ সঙ্গীত যার সবই আন্তর্জাতিক মানের। তাই বলা যায় বাংলা সিনেমা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর মত অবস্থায়ই রয়েছে, এখন কেবল দরকার চলচ্চিত্র সম্প্রদায়টিকে সমর্থন জোগানো। এবং আবারও বলছি, সেটা পাইরেসির মাধ্যমে নয়, সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে।বৈশ্বিক ভারতীয় হিসেবে আমাদেরকে কম দামে পাইরেটেড ডিভিডি কেনা বা ভাড়া করা বন্ধ করতে হবে। কেউ যদি ডিভিডির মূল কপি না কিনে পাইরেটেড কপি কিনে তাহলে নির্মাতা অর্থ হারায়। আর যথেষ্ট আয় করতে না পারলে নির্মাতারা নতুন মানসম্পন্ন সিনেমা বানাতে পারেন না।





বিপ্লব: আমি মনে করি বর্তমানে পাইরেসির চেয়ে ভয়ংকর জিনিস হচ্ছে টরেন্ট। কারণ বিট টরেন্টের মাধ্যমে অন্য কম্পিউটার থেকে খুব সহজেই যেকোন কিছু পাওয়া যায়।





সম্রাট: ঠিক তাই। সুতরাং আমি মনে করি যদি আমরা সুমন ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন এর মত চলচ্চিত্রকারদের সিনেমার মূল কপি কে সাপোর্ট করি তাহলে বাংলা বা ভারতীয় সিনেমা বৈশ্বিক মার্কেটে আরও এগিয়ে যেতে পারবে।





বিপ্লব: আমার শেষ প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?





সম্রাট: আমার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা খুবই সরল। আমি অভিনেতা হিসেবে সিনেমার মাধ্যমে গল্প বলে যেতে চাই, বিশেষ করে এমন সব গল্প বলতে চাই যার সাথে বর্তমান সমাজের সম্পর্ক রয়েছে। তা সে হলিউড, ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা বেংগলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন। আমার কাছে সিনেমা একটি সর্বজনীন ভাষা। এটা বাংলা বা হিন্দি বা এমনকি ইংরেজিরও উর্ধ্বে। একটি নির্বাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও সবকিছু প্রকাশ করা সম্ভব। আমি অভিনেতা হিসেবে এভাবে গল্প বলে যেতে চাই তা সে এলএ, নিউ ইয়র্ক, বোম্বে বা কলকাতা যেখানেই হোক।

No comments:

Post a Comment