সম্পাদক বিপ্লব পালের প্রশ্নের মুখমুখি চিত্র পরিচালক সুমন ঘোষ।
১৬ ই মার্চ-অর্থাৎ এই সামনের মঙ্গলবার, তার নতুন সিনেমা দ্বন্দ্ব, গোটা উত্তর আমেরিকাতে মুক্তি পাচ্ছে। ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের সৌজন্যে
নেট ফ্লিক্স, ব্লক ব্লাস্টার এবং আমাজনের রিলিজ হচ্ছে, এই নতুন সিনেমা দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।
এই প্রথম কোন বাংলা সিনেমা একই সাথে ভারতে এবং আমেরিকাতে রিলিজ হচ্ছে । শুধু তাই নয় রিলিজের সাথে সাথে তা নেটফ্লিক্স, আমাজন বা ব্লক ব্লাস্টারে
পাওয়াও যাচ্ছে।
সেই দ্বন্দ্ব নিয়েই আমরা কথা বলছি সুমন ঘোষের সাথে-যিনি একই সাথে অর্থনীতির অধ্যাপক এবং চলচিত্র পরিচালক।
বিপ্লবঃ দ্বন্দ্বের এই গল্পটা কবে থেকে মাথায় এল? হঠাৎ ত্রিকোণ প্রেমের সমস্যা নিতে এক্সপেরিমেন্ট করতে ইচ্ছুক হলেন কেন?
সুমনঃ ত্রিকোণ প্রেমের গল্প দ্বন্দ্ব তা নয়, তবে মূল ন্যারেটিভ টা তাই।এখানে আরো কিছু এক্সপ্লোর হয় একজন ডাক্তারের প্রিন্সিপল, প্রিন্সিপল টুওউয়ার্ডস প্রফেশন, পারসোনাল প্রিন্সিপল। এই ছবিটার গল্প আমার মাথায় আসে অর্থাৎ দ্বন্দ্ব গল্পের মূল inspiration ছিল ক্রিস্টভ ত্রিকলস্কির একটা ছোট গল্প। সেটা দেখি এবং গল্পটা আমার মাথায় ধরে। তখন আমি ভাবি এটা একটা contemporary rendition। সুতরাং অনেক বছর পর এই রকম কাহিনী বাংলা ছবিতে খুব interesting হবে।এবং শেষ পর্যন্ত ঠিক করি। ছবিতে সৌমিত্র চ্যাটার্জীর চরিত্রটিকে ভাবি এবং সেটাকে কি করে আরো explore করা যায় ওনার অভিনয়ের মাধ্যমে। আমার প্রথম ছবিতে উনি আমার সাথে কাজ করেছেন।সবমিলিয়ে সিনেমাটাকে একটা নতূন রুপকরণ দেওয়া হয়েছে। এটা খুবি জরুরি, কারণ এটা fake property।
বিপ্লবঃ বাঙালী সমাজের রক্ষণশীলতা কি বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক করার পক্ষে একটা বাধা? বিশেষত এই ধরনের থিমে যে কোন বিদেশী পরিচালক যৌনতা নিয়ে যতটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারবেন, আপনি পারবেন না।
সুমনঃ হ্যাঁ ঠিক।আমাদের সমাজে তথা বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এটা allowed না। তবে যদি আমার এই ছবি দ্বন্দ্বে যৌনতার দৃশ্য রাখার দরকার হত, আমি পিছপা হতাম না । দ্বন্দ্বের মত ছবিতে এরকম দৃশ্য রাখার দরকার ছিল না। কিন্তু ছবিটির কাহিনী শুনে অনেকে হয়ত যৌনতা রাখার ডিমান্ড করবেন।আমার মনে হয়নি যে এটা রাখার দরকার ছিল তাই রাখা হয়নি।এখানে যখন আন্তর্জাতিক সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে ইরানে ত অনেক বেশী সেন্সরশিপ । Abbas Kiarostami, Jafar Panahi, Majid Majidi এর সিনেমা তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে । তারা যা দেখাতে পারে না ,আমরা বাংলা ছবিতে দেখাতে পারি।কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের ছবির মান অনেক উচ্চমানের। সুতরাং আমার মনে হয় না যে বাঙালী সমাজের রক্ষণশীলতা বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক করার পক্ষে একটা বাধা।
বিপ্লবঃ সত্যজিত রায় পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অনুদানে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা বানিয়েছেন। বর্তমানে রাজ্য সরকার সেসব অনুদান বহুদিন হল বন্ধ করে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মার্কেটের জন্যে বাঙালী সিনেমা বানিয়ে কি আপনার মনে হয় একটা বিকল্প পথের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে?
সুমনঃ হ্যাঁ definitely অনেক সহজ হবে। দেখুন বর্তমানে অনেক বাংলা ছবি আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না তা নয়।আমি সব ছবির কথা বলতে পারবো না, তবে কিছু ছবির কথা বলতে পারি যে সত্যজিত রায়ের পরবর্তীকালে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’ বা সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘হারবার্ট’এগুলো সব আন্তর্জাতিক মানেরই ছবি। তবে হ্যাঁ এই সমস্ত ছবি যে সময় হয় তখন বাংলা ছবির মার্কেটটা খুবি কম বা ছোট।এরকম ঘরানার ছবি কলকাতার কিছু হল এবং বোধহয় শিলিগুড়ি বা বর্ধমানের মত কিছু বড় শহরের হলে মুক্তি পায়। সে টা যে বক্স অফিসের দিক থেকে খুব ভাল সে রকম কিছু না। সুতরাং আমার মনে হয় বাংলা ছবির মার্কেট টাকে আরো expand করা উচিত এবং বক্স অফিস ধারণাটাকে গ্লোবালাইসড ওয়ার্ল্ড এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।এরফলে পরিচালক যারা ‘বাড়িওয়ালি’ বা ‘হারবার্ট’এর মত সিনেমা তৈরি করে তেমন বাণিজ্যিক সফলতা পাননি তাঁরা আরো আগ্রহী হবে এই রকম সিনেমা তৈরী করতে। এবং আরো ‘বাড়িওয়ালি’ বা ‘হারবার্ট’এর মত ছবি তৈরি হবে ও ছবিগুলি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবে।
সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সত্যজিত রায়, গৌতম ঘোষ বা মৃণাল সেনের পরিচালিত সিনেমাগুলো তে আর্থিক সাহায্য করেছিলো। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গেছে।এক্ষেত্রে এখন ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের উদ্যোগটা যথেষ্ট ভালো।যা বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে ভালো হবে।
বিপ্লবঃ আমেরিকাতে একটা বিদেশী সিনেমা ১০ মিলিয়ান ডলার করতে পারলেই-বিশেষ ভাবে সফল বলে বক্স অফিস মনে করে। এই দশকে আমেরিকার সফল বিদেশী সিনেমা গুলি যদি আমরা দেখি-যেমন মটোর সাইকেল ডাইরি বা টক টু হার। বা ফেয়ার ওয়েল টু মাই কঙ্কুবাইন বা এম্পায়ার এন্ড দি এসাসিন এর মতন আন্তর্জাতিক ভাবে সফল চাইনিজ সিনেমা গুলির মধ্যে কিছু কমোনালিটি আছে-এই সিনেমা গুলি রাজনৈতিক ঐতিহাসিক পটভূমিকা এবং সেই বিশাল ক্যানভাসে দাঁড়িতে মানবিক সম্পর্ক গুলি যৌনতার কষ্টিপাথরে যাচাই করেছে। দ্বন্দ্ব সেখানে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?
সুমনঃ প্রথমত কোনো তুলনা হয় না।আপনি যাদের নাম বললেন সেই সমস্ত সিনেমা বা সেই সমস্ত সিনেমার বিখ্যাত পরিচালকদের সাথে।
আমার ছবি জাতীয় পুরস্কার পায় সৌমিত্র চ্যাটার্জী সেরা অভিনেতা এবং আমার সিনেমা বেস্ট বাংলা ফিল্ম হিসেবে।বেস্ট বাংলা ফিল্ম তবে সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি না। আমি বাংলা ছবিকে হেয় করছি না , আমি নিজেকে হেয় করছি আর কি।একটা ছোট মাপকাঠি দিয়ে মাপলেই বোঝা যাবে।সত্যজিত রায়ের পরবর্তীকালে ১৯৯০ সালের পর থেকে ২০০০ শতকে কোন বাংলা ছবি মেজর কোন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা সেকশনে গেছে কিনা আমার জানা নেই বা কোন কম্পিটিশন সেকশনে বাংলা ছবি দেখানো হয়েছে বলতে পারেন? সুতরাং সেখান থেকেই বাংলা ছবির মাপকাঠিটা পরিষ্কার বোঝা যায়।
বিপ্লবঃ বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক করতে কি কি দরকার? ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারে বাংলা সিনেমা কি ভাবে উপকৃত হবে?
সুমনঃ বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক করতে বাংলা সিনেমার মার্কেট টাকে আরো বাড়াতে বা expand করতে হবে।ডিমান্ড ও সাপ্লাই ব্যাপারটা জানেন তো। সেই অনুযায়ী বাংলা ছবিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আগে তো এটা ছিলনা। তবে ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের সহায়তায় বাংলা ছবির মার্কেট টা অনেক বেশী ছড়িয়ে পড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলা ছবির ভালো চাহিদা হবে। বাংলা ছবি আবার সফলতা পাবে বলে আশা রাখি।
( ভিডিও তে ইন্টারভিউটি শুনুন)।
No comments:
Post a Comment