Friday, July 23, 2010

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি-মাওবাদি অত্যাচার থেকে এখন মুক্তি চাইছে আদিবাসিরা



ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়াটাই নিয়ম।
আর যদি ভুল আদর্শবাদের পথে লোককে ঠেলে, তাদের ক্রমাগত পাঁঠাবলি দেওয়া হতে থাকে, এবং এটাই যদি কমিনিজমের সর্বত্র ইতিহাস হয়-তাহলে বলতেই হবে জঙ্গল মহলে মেয়েরা যেভাবে "জনগণের কমিটি" ( যা এখন প্রকাশ্যেই মাওবাদিদের একটি উইং হিসাবে কাজ করছে) এর বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়িয়েছে-তাতে এটা পরিস্কার মাওবাদিদের পায়ের তলার ভিত নড়ে গেছে। আর যত সেই ভিত নড়ছে-ততই তাদের অত্যাচার বাড়ছে।

১৯১৮-১৯ সালে রাশিয়ার ইতিহাসে ঠিক একই ঘটনা ঘটে। অনেক আশা জাগিয়ে ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে নির্বাচিত এসেম্বলিকে রেড আর্মির বন্দুকের নলের সামনে ভেঙে শ্রমিক শ্রেনীর প্রতিনিধি বলে দাবী করে লেনিনের বলশেভিক গুন্ডা বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। কিন্ত সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ১৯১৮ সালে শুরু হয় লাল সন্ত্রাস বা বলশেভিকদের গুন্ডামো। যেসব শ্রমিকরা এক সময় বলশেভিক পার্টি বা লেনিনকে সমর্থন করেছিল-তারাই রাশিয়ার সর্বত্র বলশেভিক পার্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। তারা ভেবে ছিল লেনিন শ্রমিক কৃষকের উদ্ধার কর্ত্তা-তারা ভাবে নি ক্ষমতায় গেলে সবাই হয় রাবণ। আর লাল বিপ্লবীরা ক্ষমতা পেলে তারা হয় দশাণন। কিন্ত তখন সেনা বাহিনী ছিল লেনিনের হাতে। ৫০০,০০০ শ্রমিক কৃষককে হত্যা করে লেনিন ক্ষমতা অটুট রাখেন।

কিন্ত জঙ্গল মহলে ত আর মাওবাদি দের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নেই। এখানে মাওরা খুন করলে, আধাসেনা বাহিনীর কাছে খবর পৌছে দিলে, মাওরা মার খাবেও। গত দুই বছরে মাওবাদিদের হাতে বন্দীত্ব আদিবাসিদের কাছে খুব সুখকর হয় নি। তারা ধীরে হলেও বুঝেছে জলে মাওবাদি, ডাঙায় পুলিশ-এই অবস্থায় তাদের জীবনটাই নষ্ট হতে চলেছে। মাও কিবা সরকার-কেওই তাদের বন্ধু না-সবার কাছেই তারা দাবার বোরে। তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে মাওবাদিরা গুলি মারবে-আর সরকার পেটে বসাবে।

এইভাবে কমিনিউস্ট গুন্ডা বাহিনী নামিয়ে আদিবাসিদের উন্নতির কোন আন্দোলন করা সম্ভব না আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি। শত্রু যখন শক্তিশালী, অহিংস আন্দোলনের কোন বিকল্প সেদিন ও ছিল না। আজ ও নেই। প্রশ্ন উঠবে যারা আহিংস পথ নিয়েছিলেন-যেমন হিমাংশু কুমার বা ডঃ বিনায়ক সেন-তাদের ওপর পুলিশী অত্যাচার নেমে এসেছে। আমার পালটা প্রশ্ন হল গান্ধীবাদিরা কি বৃটিশ পুলিশের লাঠি খান নি , না বৃটিশদের জেলে যান নি? ইতিহাস সেই বৃটিশ দের মনে রেখেছে-না মাতঙ্গিনী হাজরাকে মনে রেখেছে? পুলিশ হিংসাত্মক হলেই হিংসার পথ নিতে হবে? তাহলে ত অহিংসার দর্শনেরই পরাজয়। শত্রুকে তার ভুল বোঝানোই আসল গান্ধীবাদ-আর শত্রু তার ভুলের মধ্যে দিয়েই সেটা বুঝবে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে আদিবাসিদের শত্রু আমরা। সভ্য বাঙালী বা ভারতীয়রা। সেই বোধটা বা সংবেদনশীলতাই যখন ভারতবাসীদের মধ্যে জাগরুক না-তখন মাওবাদিদের খুনোখুনি আদিবাসীদের কোন সমস্যার সমাধান করবে? এটাত সরল সমীকরন। আদিবাসীদের ঢাল করে কিছু রোম্যান্টিক বিপ্লবী ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে। আদিবাসীরা আর বেশীদিন বোরে হতে চাইবে না। সেই সময় আজ আগত।

No comments:

Post a Comment