Wednesday, July 21, 2010

বঙ্গ সম্মেলন ২০১০ -বাঙালী আর কবে শিখবে?




(১)
আমি আমেরিকাতে এসেছি ২০০১ এর জানুয়ারীতে-নাসডাক যখন হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে সেই বছর এসেই বঙ্গ সম্মেলনে গিয়েছিলাম-বস্টনের লাওয়েলে আসলে বঙ্গ সম্মেলন নিয়ে আনন্দবাজার আগে এত হাইপ মার্কেটিং করেছে -বলাযায় একগাদা প্রত্যাশা নিয়েই গিয়েছিলাম বস্টনে তখন উদ্যোক্তাদের টাকা ছিল না-কনভেনশন সেন্টার ভাড়া করার বাজেট তাদের ছিল না হাইস্কুল ভাড়া করে বঙ্গ সম্মেলন হত পাত পেড়ে মাছ ভাত শুক্ত খায়িয়েছিল খারাপ লাগে নি তখন কোলকাতা থেকে হাতে গোনা কয়েকটা গয়না বা শাড়ির স্টল বসত

(২)

এরপর দীর্ঘদিন বঙ্গ সম্মেলনে যাওয়া হয়ে ওঠে নি-২০০৮ সালে টরেন্টো বঙ্গ সম্মেলনে বহুদিন বাদে গেছি। সেখানে বেশ অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। খাবার দাবার কিছু ছিল না। আমার এক কাকাশশুরের বাড়ি থেকে যাতায়াত করছিলাম। শুক্রবারে ওপেনিং সেরিমনির দিনে রাত আটতেই খাবার শেষ। নচিকেতা, বিপ্লব সহ অনেক কেই স্থানীয় টরেন্টোবাসিরা খায়িয়েছিল। মির শেষমেশ খিদের চোটে আমাকেই বলেই দিল-এটা কি ধরনের সম্মেলন দাদা? উদ্যোক্তাদের ধারে কাছে পাওয়া যায় নি। বোধ হয় গণ ধোলাই এর ভয়ে কেওই আর নিজেদের টরেন্টো সম্মেলনের উদ্যোক্তা বলে পরিচয় দেয় নি। এই কেলেঙ্কারী থেকে বে এরিয়ার বাঙালীরা শিক্ষা নিয়ে ২০০৯ সালে আবার খাবারের বন্দোবস্ত ভাল ছিল বলেই শুনেছি। কারন উদ্যোক্তারা
কিচেন নিয়ে যত্ন নিয়েছিলেন।

২০১০ সালে আটলান্টিক সিটিতে আবার টরেন্টোর স্মৃতি ফিরে এল। ক্যাটারিং এর দ্বায়িত্বে ছিল শাওনাওয়াজ বলে এক পাকিস্থানি দোকান। তাদের যঘন্য ডিমের কারি খেয়ে বাঙালীর উৎসবের আমেজ আর মেজাজটাই এবার দফারফা হয়েছে। বাঙালী খাবার ছারা কি করে বঙ্গোৎসব হয়? সেটা গোটা পৃথিবীর বাঙালী বুঝলেও উদ্যোক্তা বাঙালী বোঝে না-কারনা তাদের দৃষ্টি কি করে সেই খাবারের দোকানীর কাছ থেকে মোটা স্পনসর পাওয়া যায়! কেন সেই স্পনসর লাগে, কোথায় সেই টাকা যায়-সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। কারন যে বঙ্গ সম্মেলনে অভিজিতের মতন বলিউডি গায়করা গাইবেন-আর শুভমিতার মতন শিল্পীদের পাত্তা নেই-সেখানে অভিজিতের হিন্দি গান শোনার বিল মেটাতে বাঙালীকে কেন অখাদ্য পাকিস্থানী খাবার খেতে হবে ঐ দুই দিন-সেটা আমার সাধারন বুদ্ধিতে বোধগম্য না।


(৩)
অনুষ্ঠান নিয়ে বেশী কিছু বলার নেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করল ক্যাকটাস নামে কোন এক কোলকাতার নৃত্যগোষ্ঠী। কেমন করেছে? দু একটা স্যাম্পল এখানেই দেখুন। তাদের নাচের সমালোচনা করছি না-কিন্ত যেমন খুশী তেমন নাচ বা গরুর লেজে রঙ দিয়ে কেও ছবি আঁকলে যে এবশট্রাক্ট আর্ট হয়-সেটা কারুর কারুর ওপর অত্যাচার ও হতে পারে। আমি ১৫ মিনিট দেখেই উঠে গেছি। খুব পরিস্কার ভাবে উদ্যোক্তারা দ্বায়িত্ব দিয়েই খালাস ছিলেন-কেও দেখেনি আসলে হচ্ছে টা কি। ক্যাকটাস তাও নাচতে পারে-যারা বিদায়ী অনুষ্ঠান করল-ভারতীয় আর জাপানী নৃত্যের কোলাজ করে-সেটাত আরো ভয়াবহ। ওই গ্রুপের নৃত্যশিল্পীদের চেয়ে যেকোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা এখানে ভাল নাচে। উৎপল ফকিরের গান খুব ভাল লেগেছে।
অনীক অনেক উন্নতি করেছে দেখলাম। আমি অধিকাংশ সময় ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের স্টলে থাকায়-বাকী অনুষ্ঠান খুব বেশী দেখিনি-তবে অভিজিত অসহ্য লেগেছে। উপস্থাপনা সেই গ্রাম্য বোকা বোকা ভাঁড়ামো। ন্যাশভিলের স্থানীয় বঙ্গ সম্মেলনে পরিচালনার দ্বায়িত্বে ছিলেন আনন্দবাজারের সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য্য। দারুন লেগেছে আমার। কারন প্রতিটা শিল্পীকে খুব ভালভাবে চেনেন গৌতমবাবু। সেইতুলনায় বঙ্গ সম্মেলনের উপস্থাপনা দেখে মনে হচ্ছিল-নদীয়ার মফঃশহরে বসে শীতকালের টলিউড নাইট দেখছি!

(৪)

বঙ্গ সম্মেলনে গানকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়-সিনেমা বা নাটক দারুন ভাবে অবহেলিত। মূলত ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের অনুষ্ঠানগুলি কভার করছিলাম বলে সিনেমার দিকটাতেই ছিলাম। সিনেমাকে যেভাবে দুয়োরাণী করে রাখা হয়েছিল-তাতে কোলকাতা থেকে আগত ফিল্মস্টারদের অনেকেই অপমানিত বোধ করেছেন। অরিজিত খুব ভদ্রভাবেই
উদ্যোক্তাদের কাছে সাজেশন রেখেছেন-২০১১ সালে ফিল্ম সেকশনটিকে গুরুত্ব দিতে
বারের সব থেকে বড় স্পনসর ছিল-ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার, যারা সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা আমেরিকাতে হলে দেখাচ্ছে বা আমাজনের মাধ্যমে ডিভিডি বিক্রি করছে। অথচ-চলচ্ছিত্র সেকশনটিকে যেভাবে অন্য হল ঘরে রাখা হয়েছে, তা বাঞ্ছনীয় না। পরেরবার সিনেমা সেকশনটিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। মেইন স্টেজে স্থানীয় শিল্পী বেসুরো স্বরে গাইবে-আর একটি পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা সিনেমা ২০০ জনের হলে দেওয়া হবে-তা বেশ দৃষ্টিকটু।

(5)

স্পনসর রা বঙ্গ সম্মেলন কোন দিন ই পছন্দ করে নি। কিন্ত আমেরিকান বাঙালী সমাজে এর বিকল্প না থাকায় এত দিন বঙ্গসম্মেলন ছিল রিয়াল এস্টেট মুঘলদের ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। এবার প্রথম বারের মতন ন্যাশভিলে আঞ্চলিক বঙ্গ সম্মেলনের জন্ম হয়েছে। সেখানেও গিয়েছিলাম। ন্যাশভিলের আঞ্চলিক বঙ্গসম্মেলন দারুণ সফল। এই ট্রেন্ড চালু থাকলে ২০১২ সাল থেকে বঙ্গ সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের কপালে দুঃখ আছে।

শাড়ি বা গয়নার দোকানীদের বিক্রি ভালোই ছিল। তাদের লোকসান হয় না। কিন্ত রিয়াল এস্টেট কোম্পানী গুলো দেখলাম বেজায় অখুশী। একেত তাদের স্টলের পজিশন ছিল ভেতরে। তারপর বঙ্গ সম্মেলন নতুন বাঙালীদের একদম টানতে পারছে না। রিয়াল এস্টেট আসে নতুন খরিদ্দারের খোঁজে। নতুন বাঙালী আমেরিকাতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে ২০০৮ সালের রিশেসনের পর থেকে। ফলে রিয়াল এস্টেটের জন্যে বঙ্গ সম্মেলন আমের আঁটি। তবে গয়না আর শাড়ি বিক্রি বেড়েই চলেছে। ডিভিডি বিক্রিও ভালোই হয়েছে- বই এর নতুন পড়ুয়া নেই। নামী শিল্পীদের ছবির ভালো কাটতি ছিল। মোটামুটি ১৫০০-২০০০ বাঙালী আসে বঙ্গ সম্মেলনে। সব মিলিয়ে ২০০,০০০-৩০০,০০০ ডলারের বেশী কেনা কাটা হয় বলে মনে হয় না। তাও তার সিংহভাগ যায় জুয়েলার্সদের পকেটে। তবে এটাও ঠিক-বঙ্গ সম্মেলন বিশ্বের সব থেকে ধণী বাঙালীদের সম্মেলন।

এবার বিজনেস ফোরাম ভালোই চলেছে। আরো অনেক বেশী বাঙালী ব্যাবসাতে আসছেন-এটা দারূন সুখবর। আরো বেশী বাঙালী ব্যাবসায়ী বঙ্গ সম্মেলনে আসুন। এটাই চাইব।

1 comment:

  1. Amar 2004 ar 2009 er NABC r obhigyota ache. dutotei kharap chilo na byapar ta. tobe jegulo bola hoyeche segulo amra bangali somaje hameshai dekhi. SoCal er BASC ekta serokom akhra, joto nongramo dekhechi ekhane segulo amader bosti elaka teo hoi na. dhorun promise kore chada nilo je program er ticket debe. sobai $200 dilo. tar pore program er din karo patta nei, ar ekta sikhondi ke dorjai bosiye dewa holo je matro 100 ta ticket diye bollo ticket sesh. ei gulo kothay hoi? aparently era naki eksomoy porasuno ar chakri sutre edeshe eseche. eta ek bochor noi proti bochor hoi. pore sunlam sekhan theke kichu lok beriye geche ar ekta notun pujo te tarai abar management e dhokar jonne "gaye mane na apni morol" hoye todaroki korche. jemon, tader keo poche na, kintu dhorun apni khabar line e dariye achen, ar se ese bollo "dada line ta beke geche". abar kichu pore tini ese bole gelen "taratari kheye nin, ebar onjoli hobe". bangali sotti i bichitro. apni jodi baire theke eder observe koren mone hobe apni circus dekhchen:)

    ReplyDelete