Sunday, March 15, 2009

ক্যালিফোর্নিয়ার পিঙ্ক ফ্রাইডে




গত শুক্রবার (১৩ই মার্চ) দেউলিয়া ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যসরকার ১ লক্ষ সরকারী কর্মচারীকে ছাঁটাই এর নোটিশ ধরিয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার স্কুল শিক্ষক। আমেরিকার ইতিহাসে একদিনে এটি বৃহত্তম ছাঁটাই। ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর থেকে দক্ষিনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। সব শহরে পিঙ্ক রঙের সার্ট পরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। মিডিয়া এই কালোদিনকে ডাকছে "পিঙ্ক ফ্রাইডে"। পথ চলতি গাড়িগুলি হঙ্ক করে তাদের সমর্থন জানাচ্ছে।

একই দিনে খবর এ আই জ়ির কর্নাধাররা ১৬০ মিলিয়ান ডলার বোনাস নিচ্ছে ট্যাক্স পেয়ারদের বেইল আউটের পয়সা থেকে। ওয়াশিংটন সব জেনেও আইনগত কারনে নাকি আটকাতে পারছে না-ক্ষোভই সার। এই এ আই জি বর্তমান কোয়ার্টারে ৬০ বিলিয়ান ডলার লস করে সরকার থেকে ১৬০ বিলিয়ান ডলার বেইল আউট প্যাকেজ পেয়েছে দুই দফায়। যেসব লোভী ম্যানেজারদের জন্যে আজ আমেরিকা তথা গোটা পৃথিবীর দুরাবস্থা, তারা মিলিয়ান ডলার বোনাস তুলছেন ট্যাক্স পেয়ারদের টাকায়। আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তাড়াতে হচ্ছে স্কুল থেকে আমাদের ছেলেমেদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিয়ে। ধণতন্ত্রের কঙ্কাল চারিদিকে।

ক্যালিফোর্নিয়ার শিক্ষার হাল এমনিতেই খুব করুন। ৫২ টি রাজ্যের মধ্যে ৫০তম। ৩৫% শিক্ষক-শিক্ষিকা কম এমনিতেই ছিল। এখানে একটু সামর্থ্য থাকলে সবাই ছেলেমেয়েদের বেসরকারী স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হয়। এমন নয় বেসরকারীস্কুল আমেরিকায় সবাই পছন্দ করে। ইস্টকোস্টে বেসরকারী স্কুল গুলি মোটেও ভাল না-সবাই সরকারী স্কুল পছন্দ করে। ক্যালিফোর্নিয়াও ব্যাতিক্রম ছিল না-কিন্ত স্কুলে ৩৫% শিক্ষক শিক্ষিকা না থাকলে সেই স্কুল চলবে কি করে? এই ছাঁটাই এর পর-তা আরো মারাত্মক হল। এমনিতেই প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষায় ক্যালিফোর্নিয়া সব থেকে পিছিয়ে। এবার স্কুলগুলো চলবে কি করে কে জানে! স্কুল চালানোর পয়সা নেই অথচ ঘটা করে এরা ইরাকের যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যাতে ওয়াশিংটনের ঠিকেদারদের পকেট ভরে। জনসাধারনের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হল কি না তাতে তাদের কি যায় আসে! ইরাকের যুদ্ধে শুধু ইরাকের লোকই মরে নি-আমেরিকান ভবিষ্যত প্রজন্মও পঙ্গু হয়ে গেছে শিক্ষার টাকা যুদ্ধে ঢালায়। হ্যাঁ-এটাই হচ্ছে উদারনীতির ধণতন্ত্র-সরকারকে লুঠে খেয়ে দেশকে দেউলিয়া করার রাজপথ।

ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সর্বোৎকৃষ্ট ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সিস্টেম চালায়। সেখানেও অধ্যাপকদের বলা হচ্ছে নিজেদের বেতন নিজেদের উপায় করতে হবে। সরকার বেতন দিতে পারবে না। তাদের প্রোজেক্ট থেকে স্যালারী জোগার করতে হবে। এটা অনেক স্কুলেই ছিল-এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল প্রফেসরদের এতে সমস্যা নেই। বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগের অধ্যাপকরা সম্পূর্নই প্রায় সরকারি মাইনার ওপর নির্ভরশীল। কেও কেও ব্যাতিক্রম। তাদের সামনে ঘোর দুর্দিন।

আমি বুঝতে পারছি না ব্যাঙ্কগুলো বাঁচাতে শয়ে শয়ে বিলিয়ান ডলার ঢালা হচ্ছে। এই সেই ব্যাঙ্কগুলি- যাদের দুর্নীতি এবং লোভে আজ অর্থনীতি রসাতলে। সরকারে নিজেদের দালালদের ম্যানেজ করে তারা তাদের কৃতকর্মের পুরষ্কার স্বরূপ মিলিয়ান ডলার বোনাস পাচ্ছেন। আর ভুগছে সাধারন শ্রমিক। শিক্ষকরা। এইসব চোখের সামনে দেখে ভোটে বাক্সে ফেটে পরেছিল আমেরিকা-কিন্ত যত দিন যাচ্ছে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ওবামা চেষ্টা করেও বোনাস আটকাতে পারছেন না। মাইনে বেঁধেদিতে গেলেন-তাই বেশ উঁচু মাইনে। সেটাও শুনছি আইন পরিবর্ত্তন না করে আটকাতে পারবেন না। সরকারী বেইল আউটের টাকায় সব ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানী তাদের ম্যানেজমেন্টের জন্যে লাস ভেগাসে আমোদের আয়োজন করছেন-আর স্কুলে শিক্ষক নেই। সত্যি একেই বলে ফ্রি-মার্কেট। আমার ত মনে হচ্ছে ফ্রি লুঠতরাজ।

এই ধরনের সমাজের পতন হতে বাধ্য। অটোকারেকশন এখুনি দরকার। আমেরিকানরা ব্যাঙ্ক এবং ইন্সুয়ারেন্সের জাতীয়করন দাবী করছে। কোন কোন সেনেটর এতে গলা মেলালেও, ওভারঅল কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিদেন নিজেই একসময় সেনেটর থাকা কালীন ইন্সুরান্স কোম্পানীদের স্বার্থ দেখেছেন। ওবামা কেন বিদেনকে পছন্দ করলেন-আমাদের অনেকের কাছেই তা পরিস্কার না।

কিন্ত সে যাইহোক মন্দের ও ভাল দিক থাকে। দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন কংগ্রেসম্যানরা জনসনংযোগ এখন আরো ভাল করছেন। ফ্যাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের বিরুদ্ধে জনগনের ক্ষোভ সেনেটে দ্রুত পৌঁছচ্ছে। ব্লগে ব্লগে ক্ষোভ ফেটে পড়ছে। প্রযুক্তির সাথে গণতন্ত্র উন্নত হবে-এটাই কাম্য ছিল। সব থেকে বড় কথা এনরন থেকে ওয়ার্ল্ডকমের ঘটনায় জনগন এটা বুঝেছে নামি দামি দামী কোম্পানীর সি ই ও দের হিরো বানায় মিডিয়া-আসলেই তাদের সাথে পেশাদার চোরেদের পার্থক্য কম। উভয়েই টাকার লোভে জেলে যাওয়ারও রিক্স নিতে পারে। ফলে কর্পরেট আমেরিকার পক্ষে এই নতুন উজ্জীবিত জনগনকে সিএন এন আর ফক্স নিউজের গল্প দিয়ে ম্যনেজ করা যাচ্ছে না। আর কোন দিন যাবেও না। কারন স্যোশাল অলটারনেট মিডিয়াগুলো এখন আমেরিকাতে প্রচন্ড শক্তিশালী।

আমাদের দেশে ব্যাঙ্কিং এবং ইন্সিউরান্সকে বেচে দেওয়ার যে পক্রিয়া শুরু হয়ছে-তাকে থামাতে হবে। সিপিএম, কংগ্রেস, মায়াবতী, বিজেপি কেওই একে ঠেকাবে না। রাজনীতিবিদদের পার্টির নাম, এজেন্ডা বদল হয়-আসলে কেহই এই ব্যাবসায়ীগোষ্ঠির জাল কাটতে পারে না। এটা পশ্চিমবঙ্গে বামেদের অবস্থা থেকে পরিস্কার বোঝা উচিত। ওরা ভোট চাই বেসরকারীকরন আটকাবে বলে। কিন্তু সেরকম কিছু সদিচ্ছা থাকলে, আমি আগেই লিখেছিলাম, প্রকাশ কারাত তৃতীয় সার্কাসে বিজেপির প্রাত্তন দোশরদের পেছনে না ঘুরে, অন্যান্য রাজ্যে আন্দোলনে নামতেন, জমি তৈরী করতে। সেই সদিচ্ছা নেই। তাই যেসব বামপন্থী বেসরকারীকরন আটকানোর জন্যে সিপিএমের ওপর নির্ভর করতে চান-তারা মারাত্মক ভুল করবেন।

এই বেসরকারীকরন আটকানো বা ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের জাতীয়তাকরন, একমাত্র জনগনের চাপেই হতে পারে। মিডিয়া এই ব্যাপারে ব্যাবসায়ীদের পক্ষ নেবে-তাই আমাদের এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যে আমেরিকান মতন অলটারনেট মিডিয়ার আরো বেশী করে ব্যাবহার করতে হবে। আমাদের দেশে ইন্টারনেট সবার কাছে পৌছায় না-ফলে সেই অসুবিধাটা আছেই। কিন্তু যতটা সম্ভব ব্লগ, ইন্টারনেট রেডিও, ইউ টিউবের মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতন জনগন যেন অন্যদের সাথে তাদের ক্ষোভ এবং মতামত ভাগ করে নিতে পারে-সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালু করতে হবে। জনগনের মিডিয়ার সামনেই একমাত্র প্রকৃত গণতন্ত্র আসবে।

1 comment:

  1. Bip-da bhalo likheccho. Tumi Kolkatar bangla songbadpotro guli te political commentator hisebe likhte paro. Ekhon ja bhul bhalo loke likhcche tar cheye at least better likhbe.

    ReplyDelete